কলম্বিয়ায় গেরিলা আন্দোলনের গঠন হল দেশের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়। 20 শতকের শুরু থেকে, গেরিলা গোষ্ঠী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্দোলনগুলি অনেকগুলি কারণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক দমন, অর্থনৈতিক অসমতা এবং সামাজিক মার্জিনালাইজেশন অন্তর্ভুক্ত। এই নিবন্ধে, আমরা কলম্বিয়ায় গেরিলা আন্দোলনের গঠনের প্রধান পর্যায়, তাদের কারণগুলি, বিবর্তন এবং পরিণতি পর্যালোচনা করব।
গেরিলা আন্দোলনের গঠনে গভীরভাবে প্রবেশ করার আগে, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। 20 শতকের শুরুতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকটগুলি তীব্রতা বৃদ্ধি করেছিল, তা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অসন্তোষের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। গেরিলা আন্দোলনগুলির উদ্ভবের প্রধান কারণগুলি হল:
প্রথম গেরিলা গোষ্ঠীগুলি 1920-এর দশকে গঠিত হতে শুরু করে, যখন কৃষক এবং শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে ওঠে। তারা তাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য সংগঠিত হয়েছিল। গেরিলা আন্দোলনের প্রথম উদাহরণগুলির মধ্যে একটি হল কলম্বিয়ার শ্রমিক পার্টি, যা 1920-এর দশকে গঠিত হয়েছিল এবং শ্রমিক এবং কৃষকদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছিল।
1948 সালে লিবারেল নেতা হর্হে এলিসিয়া গেরেরো হত্যার পরে, দেশজুড়ে একটি সহিংসতার ঢেউ শুরু হয়, যা “লা ভিওলেনসিয়া” নামে পরিচিত। এটি গেরিলা গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেমন FARC (কলম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী), যারা রক্ষণশীল সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
FARC 1964 সালে কলম্বিয়ায় সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অসমতার জবাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই গোষ্ঠী কৃষক, শ্রমিক শ্রেণি এবং ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল, যারা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার জন্য সংগ্রাম করছিল। মার্কসবাদী চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে, FARC সেনাবাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধে গেরিলা কর্মকাণ্ড সংগঠিত করতে শুরু করে।
FARC-এর গেরিলা কৌশলে সামরিক স্থাপনার উপর আক্রমণ, আসলগ্রহণ এবং স্থানীয় সরকারের উপর হামলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। গোষ্ঠী দ্রুত তাদের প্রভাব এবং গ্রামের এলাকায় উল্লেখযোগ্য এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, যা তাদেরকে “মুক্ত এলাকা” তৈরি করতে এবং বিকল্প ক্ষমতা কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম করে।
FARC ছাড়াও, কলম্বিয়ায় অন্যান্য গেরিলা আন্দোলনও গঠন করা হয়েছে, যেমন এল নিনো এবং জাতীয় মুক্তি সেনা (ELN)। ELN 1964 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেটিও মার্কসবাদী আদর্শের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক সামাজিক বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া। এই গোষ্ঠী গেরিলা যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করেছিল এবং কৃষক এবং গরীব জনসংখ্যার সমর্থন অর্জন করার চেষ্টা করছিল।
অন্যান্য সংগঠন, যেমন M19, 1970-এর দশকে গঠিত হয়েছিল এবং নগর কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী হামলাসহ আরও উগ্র পন্থা গ্রহণ করেছিল। M19 দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও ক্ষমতার হাইজ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে মনোযোগ কেন্দ্রিত করেছে, যা এটি যুবকদের এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
সহিংসতা এবং নিষ্ঠুরতার সত্ত্বেও, কলম্বিয়ায় গেরিলা আন্দোলনগুলি জনসাধারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছে। তাদের জনপ্রিয়তার মূল কারণগুলি অন্তর্ভুক্ত:
গেরিলা আন্দোলনগুলি কলম্বিয়ার সমাজকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে, জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করেছে। এগুলি নিম্নলিখিত বিষয়ে সম্মুখীন হয়েছে:
1980-এর দশকের শেষ থেকে, সংঘাত সমাধানের এবং গেরিলা গোষ্ঠীসমূহকে দেশের রাজনৈতিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শান্তি প্রক্রিয়াগুলির সূচনা হয়েছে। প্রথম শান্তি আলোচনা 1982 সালে সরকার এবং FARC-এর মধ্যে হয়েছিল, তবে সেগুলি উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেয়নি।
1990-এর দশকে শান্তি প্রক্রিয়া আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং অনেক গেরিলা গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ভূগর্ভ থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছিল। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য 1991 সালের সংবিধানী পরিষদ গঠন করা হয়েছিল, যা বিভিন্ন গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার দিকে একটি পদক্ষেপ ছিল।
আজ কলম্বিয়ায় গেরিলা আন্দোলনগুলি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে। কিছু গোষ্ঠী, যেমন FARC, 2016 সালে সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্রবিরতি এবং রাজনৈতিক দলে রূপান্তর শুরু করেছে। তবে অন্যান্য গোষ্ঠী এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের অপারেশনগুলিকে অর্থায়ন করার উপায় হিসেবে সহিংসতা এবং মাদক পরিবহণ ব্যবহার করছে।
কলম্বিয়ায় গেরিলা আন্দোলনের গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা অনেক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণের দ্বারা চালিত হয়েছে। এই আন্দোলনগুলি কলম্বিয়ার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বর্তমান সমাজে প্রভাব ফেলতে থাকে। তাদের উৎস এবং বিবর্তন বোঝা কলম্বিয়ার সাম্প্রতিক সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। শান্তি প্রক্রিয়া এবং পুনর্মিলনের উপর কাজ করার মাধ্যমে, দেশটি একটি আরো ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।