তুর্কমেনিস্তানের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো এবং এটি প্রাথমিক মানবজাতির যুগ থেকে শুরু হয়। আধুনিক তুর্কমেনিস্তানের স্থানে প্রাচীন সভ্যতাগুলি ছিল, যেমন মেরভ এবং নিসা, যেগুলি মহান রেশম পথে বাণিজ্য এবং সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই শহরগুলি বাণিজ্য, বিজ্ঞান এবং শিল্পের কেন্দ্র ছিল।
মধ্যযুগে আধুনিক তুর্কমেনিস্তানের অঞ্চল বিভিন্ন রাজ্যের অংশ ছিল, সাসানি সাম্রাজ্য এবং আরব খলিফাত সহ। এই সময়ে ইসলাম অঞ্চলটিতে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে, যা সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। মেরভ এবং বালখের মতো শহরগুলি জ্ঞান এবং সংস্কৃতির বিখ্যাত কেন্দ্র হয়ে ওঠে, যেখানে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং দর্শন flourishing।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অঞ্চলটি চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বাধীন মঙ্গোলদের আক্রমণের মধ্যে পড়ে। এটি উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ এবং জনসংখ্যার পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায়। পরে, চৌদ্দ থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত, অঞ্চলটি সোনালী অর্ডারে যুক্ত হয়, যা আরও সংস্কৃতি এবং জাতির মিশ্রণের জন্য সহায়ক ছিল।
ষোড়শ এবং সতেরো শতকে তুর্কমেনিস্তান ওসমানীয় এবং পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রভাবের অধীনে এসেছিল। এই রাষ্ট্রগুলি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয় উপজাতিগুলি প্রায়শই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল, যা কেন্দ্রীভূত শাসনকে জটিল করে তুলেছিল।
উনবিংশ শতাব্দীতে তুর্কমেনিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশিক বিস্তারের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ১৮৬৯ সালে আশখাবাদের দুর্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা অঞ্চলে রুশ প্রভাবের সূচনা করে। একাধিক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে আধুনিক তুর্কমেনিস্তানের অঞ্চলটি জয়লাভ করে এবং ১৮৮১ সালে তুর্কমেনিস্তানের অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে অধিকার করা হয়।
1917 সালের বিপ্লবের পরে তুর্কমেনিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ হয়ে যায়। 1924 সালে তুর্কমেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী গঠিত হয়, যা এক জাতীয় প্রজাতন্ত্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। এই সময়ে দেশটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে: অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে, নতুন শিল্প খাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ব্যাপক শিক্ষা শুরু হয়েছে।
1991 সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে, তুর্কমেনিস্তান তার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়ে সাপর্মুরাত নিয়াজোভ আসেন, যিনি ২০০৬ সালে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশটি শাসন করেন। তার শাসনকালে তুর্কমেনিস্তান একটি নিরপেক্ষতা এবং বাইরের বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্নতা নীতি পালন করেছিল।
2007 সালে প্রেসিডেন্ট হন গুরবানগুলি বেরদিমুহাম্মেদভ, যিনি তার পূর্বসূরের নীতি অব্যাহত রাখেন। তার নেতৃত্বে তুর্কমেনিস্তান তার প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষত গ্যাস শিল্প, বিকাশ করতে শুরু করে। দেশটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে, এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
তুর্কমেনিস্তান সংস্কৃতি ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা প্রাচীন সময় থেকে রুপরেখা রয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্য এবং অলঙ্কৃত শিল্প জনগণের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন বছর (গুরবান বইরাম) এবং নওরোজের মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলো বিশাল আকারে এবং ভালোবাসার সাথে উদযাপিত হয়।
তুর্কমেনিস্তানের ইতিহাস হলো স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং আধুনিক বিশ্বের মধ্যে দেশের বিকাশের ইতিহাস। আজ তুর্কমেনিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি সম্মানজনক স্থান দখল করতে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার অবস্থান দৃঢ় করতে চায়।